সমৃদ্ধ স্থান সমূহ

আহসান মন্জিল

নবাব আমলের শাহী ভবন আহসান মন্জিল ঢাকা জেলার বুরিগঙা নদীর ধারে অবস্থিত । আহসান মন্জিল বাঙালী জাতির ঐতিহ্য বহণ করে আসছে যুগের পর যুগ । ৩১ টি কক্ষ বিশিষ্ট এই আহসান মন্জিল- এর অতি উচু গম্বুজ অনেক দূর থেকে দেখা যায় ।  গোলাপী আভা সমৃদ্ধ এই  ভবন সম্প্রতি সংস্করনের পর মিউজিয়াম-এ রুপান্তরিত করা হয়েছে ।  এখানে নবাবদের ব্যাবহৃত আসবাবপত্র ও চিত্রকল্প সংরক্ষিত আছে ।  এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম  স্মৃতিসৌধ ।
..................................................................................
. নদীর নামটি খুব সুন্দর। কাজলা। তার উত্তর পাড়ে ৭৭ একর জায়গাজুড়ে বিশাল এক আমবাগান। আকার-আয়তন যেমন বড়, বয়সেও তেমনি পুরোনো। অন্তত সাড়ে ৩০০ বছর তো হবেই। তবে সেই আমলের সব গাছ এখন আর নেই। সব মিলিয়ে বাগানে এখন গাছ আছে সাড়ে ৩০০। এর বেশ কিছু গাছ অনেক বয়সী। কিন্তু তার কোনোটি সেই আদ্যিকালের বাগানের গাছ কি না, তা স্রেফ চোখে দেখে বলা সম্ভব নয়। বাগানটিও আর সেই আগের দিনের মতো নেই। হতশ্রী চেহারা। কাজলা নদীটিও তা-ই। এককালে হয়তো কাকচক্ষু জলের স্রোতস্বিনী ছিল। এখন হাজামজা। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের মতো জীর্ণশীর্ণ। 
কাজলার তীরের এই আমবাগানের মধ্যে ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির এক কুঠিবাড়ি। বাংলার ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক ঘটনার নীরব সাক্ষী এই বাড়ি। এখানে বসেই একদা লর্ড ক্লাইভ আর মীর জাফর আলী খান ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে। শোনা যায়, সিরাজের কুচক্রী খালা ঘষেটি বেগম আর সুযোগসন্ধানী অভিজাত-অমাত্যদের মধ্যে জগৎ শেঠ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদও ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। লোকমুখে এখন বাড়িটির নাম ‘আমঝুপি কুঠি’। সম্প্রতি দুই সহকর্মীকে নিয়ে দেখে আসা হলো ঐতিহাসিক এই কুঠি।
মেহেরপুর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার পথের ধারেই পড়ে আমঝুপি গ্রাম। গ্রামের নাম থেকেই কুঠিবাড়িটির নাম। এটি ছিল ব্রিটিশ নীলকরদের কুঠি। তবে আমবাগানটি নাকি তারও আগেকার। নবাব আলিবর্দী খান আমবাগানটি করেছিলেন এবং এখানে তিনি মাঝেমধ্যে আসতেন কাজলা নদী দিয়ে বজরায় করে।
নদীর পাড়ে দক্ষিণ দিকে মুখ করা বাড়িটি। বারান্দার সামনে নিচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাগান। তার ভেতর দিয়ে ধাপে ধাপে সিঁড়ি চলে গেছে একেবারে নদীর কিনার অবধি। নদীই ছিল তখন প্রধান যাতায়াতের পথ। সে কারণে বাড়ির সামনেই ঘাট। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা বাড়িটির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, উত্তর দিক দিয়েও এর ভেতরে প্রবেশ করা যায়। এদিকটাতেও চমৎকার বারান্দা। তবে সিঁড়িটি সংগত কারণেই অত দীর্ঘ নয়। আর ফুলের বাগানের বদলে এদিকে আছে আমবাগান। এখন নদী শুকনো। তাই উত্তর দিকে আমবাগানের মধ্য দিয়েই পিচঢালা পথ। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক থেকে এই পথ দিয়েই লোকে এখন গাড়ি নিয়ে সোজা চলে আসে আমঝুপি কুঠির সামনে।
মাঝখানে একটি বৃত্তাকার ঘর। তার সঙ্গে লাগোয়া লম্বা সরলরেখায় দুই দিকে আরও কয়েকটি ঘর। সব মিলিয়ে ঘর ১৪টি। দক্ষিণের বাগানের কিনার দিয়ে স্থলপদ্মের কয়েকটি ঝাড়। প্রচুর ফুল ফুটেছিল গাছগুলোয়। সচরাচর স্থলপদ্মের এমন ঝাড় চোখে পড়ে না। এ ছাড়া বারান্দার দুই পাশে আছে বেশ বড় দুটি ম্যাগনোলিয়া গ্র্যান্ডিফ্লোরার গাছ। আছে হলুদ ফুলে ফুলে ভরা এলামন্ডা, মধুমালতীর ঝাড়, গোলাপ, রঙ্গন, রজনীগন্ধাসহ সব মৌসুুমি ফুলগাছ আর নানা রকমের ক্যাকটাস। অভিশপ্ত নীল চাষের স্মৃতি মনে করিয়ে দিতেই যেন এক পাশে একটি বেশ বড়সড় নীলগাছ। বাগানটি ছোট, তবে যত্ন-পরিচর্যায় পরিপাটি।
আমঝুপিকুঠিতে এ ছাড়া বলতে গেলে প্রচলিত অর্থে দর্শনীয় আর তেমন কিছু নেই। আমবাগানের ভেতরে, নদীর পাড়ে পূর্বদিকে লোকজনের বসার জন্য কিছু কংক্রিটের বেঞ্চ আছে। বিকেলের দিকে স্থানীয় লোকজন সেখানে বসে গল্পগুজব করে সময় কাটান। শীতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়ি নিয়ে পিকনিক করতে আসেন কেউ কেউ। তা ছাড়া সারা বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা খুবই নগণ্য বলে জানালেন কুঠির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা বেল্লাল হোসেন। পাঁচ টাকার টিকিট কেটে কুঠির ভেতরে প্রবেশ করা যায়।
আমঝুপিকুঠি মেহেরপুর উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সরকারি রেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে আগে। বেল্লাল হোসেন জানালেন ২০০৫ সালে এটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। তার পর থেকে আর রেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে না। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে উত্তর দিকের বারান্দার পাশে। তবে কুঠির আর কোনো বিবরণ কোথাও লিখিত কিছু নেই। ভেতরে দর্শনীয় নিদর্শনও কিছু নেই। সে কারণে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের এর প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। ‘কী আর দেখতে আসবে লোকে!—মন্তব্য বেল্লালের।
তবে একেবারেই যে কিছু নেই দেখার, তা মানা গেল না। এত বড় ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী বাড়িটি তো আছে! এবং তা বেশ ভালো অবস্থায়ই আছে। তা ছাড়া এই বিশাল আমবাগান, নদীর ওপাড়ে উদার আকাশের তলায় দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা অবারিত ফসলের মাঠ আর শুধু পাখপাখালির ডাকে মুখর নিরিবিলি পরিবেশ—এসব কি দেখার মতো, মন ভালো করে দেওয়ার মতো কিছু নয়! চোখে চমক লাগানোর মতো কিছু নেই সত্যি, আমোদ-ফুর্তির উপকরণের অনুপস্থিতিও স্পষ্টই, তবু ইতিহাসের এত কাছ ঘেঁষে দাঁড়ানোর সুযোগটি তো অন্তত আছে। সর্বব্যাপী ইতিহাসবিমুখতা আর বিস্মৃতিপ্রবণতার এই সময়ে একি এক অনন্য সুযোগ নয়?